জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার মত বা সুপারিশ করেছেন সংশ্লিষ্টজনেরা। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা এবং মতামত-সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন মনে করছে, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের পরই হতে পারে স্থানীয় নির্বাচন। আবার এই নির্বাচন আলাদাভাবে না করে একসঙ্গে করা যায় কি না, সেটাও রয়েছে ভাবনায়। সেই সঙ্গে এখানে পদ্ধতিগত সংস্কার করে নির্বাচিত সদস্যদের ভোটের ভিত্তিতে অর্থাৎ, ‘পার্লামেন্টারি ব্যবস্থায়’ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রধান ঠিক করা যেতে পারে।
এসব চিন্তাভাবনার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে গতকাল শনিবার টেলিভিশন চ্যানেলের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমরা নাগরিক সমাজের সঙ্গে যে মতবিনিময় করেছি, সেখানে সবার অভিমত হচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন হওয়া উচিত। কারণ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার কারণে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বাড়বে। তাদের টেস্ট হয়ে যাবে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে যে সাপোর্ট দরকার হবে, তা নিশ্চিত হয়ে যাবে।’
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিত নির্বাচন ব্যবস্থায় আনার এখন মোক্ষম সময় বলে মন্তব্য করে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমরা যদি সিস্টেম করতে পারি, একটা কম্প্রিহেন্সিভ আইন হবে। সেই আইনের মধ্যে সব প্রতিষ্ঠান চলে আসবে। এতে একটা তফসিল দিয়ে স্থানীয় সরকারের সবগুলো নির্বাচন করতে পারব। তাহলে নির্বাচন অনেক ব্যয় ও সময়সাশ্রয়ী হবে।’
এ ক্ষেত্রে সুবিধার কথা তুলে ধরে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমি হিসাব করে দেখেছি, গত কমিশন যে স্থানীয় নির্বাচন করেছে, এতে ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ওই নির্বাচন আয়োজনে ১৯ থেকে ২০ লাখ লোক লেগেছে। ভোট গ্রহণ করতে ২২৫ দিনের মতো সময় লেগেছে। তাই স্থানীয় নির্বাচনে যদি পার্লামেন্টারি সিস্টেম নিয়ে আসি, তাহলে ইউনিয়ন, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনে যদি একই সিস্টেমে ভোট করতে পারি, তাহলে খরচ চলে আসবে ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে। লোকবল লাগবে ৮ লাখ। সময় লাগবে ৪৫ দিন। ওই সিস্টেমে যেতে অধ্যাদেশ করার প্রয়োজন হবে।’
আরও যুক্তি তুলে ধরে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে স্থানীয় সরকারের পাঁচ প্রতিষ্ঠান সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে ভোট করতে পৃথক পাঁচটি আইন আছে। এসব আইন দিয়ে পৃথক পৃথক নির্বাচন করতে গেলে তা জাতীয় সংসদের আগে আয়োজন করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে।’
জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও পার্লামেন্টারি সিস্টেম আনার কথা চিন্তা করা হচ্ছে জানিয়ে ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, জাতীয় সংসদে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা যেমন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেন, তেমনি নির্বাচিত স্থানীয় সরকার সদস্যরা তাঁদের সভায় প্রধান নির্বাচন করবেন। আর সব স্থানীয় সরকার গঠন হবে এক আইনে, এক নির্বাচনে। সংস্কারের পর নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দেন তিনি।
বৈঠকে মাছরাঙা টিভির চিফ এডিটর রেজোয়ানুল হক, এনটিভির হেড অব নিউজ জহিরুল আলম, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সিএনই মোস্তফা আকমল, ডিবিসি টিভির সম্পাদক লোটন একরাম, ৭১ টিভির হেড অব নিউজ শফিকুল ইসলাম, যমুনা টিভির পলিটিক্যাল এডিটর আলমগীর স্বপন প্রমুখ অংশ নেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বৈঠকে আলোচনা হয়েছে রাষ্ট্রপতি পদে পরোক্ষ নয়, প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচন হতে হবে। রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ হওয়া উচিত। প্রার্থীদের হলফনামা যাচাই, অনলাইন ভোট পদ্ধতির প্রবর্তন এবং ‘না’ ভোট ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
সংরক্ষিত মহিলা আসনে সরাসরি ভোট চান নারী নেত্রীরা
জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা বাড়ানো এবং ওই সব আসনে সরাসরি ভোটের বিধান চেয়েছেন নারীনেত্রীরা। নির্বাচন ভবনে গতকাল বিকেলে বৈঠক শেষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহসভাপতি রেখা চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সংরক্ষিত নারী আসন বাড়িয়ে দেড় শ করার কথা বলেছি।’
সাংবাদিক আয়েশা কবীর বলেন, ‘নির্বাচনে নারীদের অধিকার, ভূমিকা ও সুযোগ দিতে হবে। প্রার্থী ও ভোটার হিসেবে শুধু নারীই নয়, পুরুষদেরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে বলেছি।’
তৃণমূল নারীনেত্রী ও কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা কুসুম বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি, সরাসরি নির্বাচন করে সংসদে যাব। সংরক্ষিত রাখার দরকারটা কী? সংরক্ষিত যাঁরা হচ্ছে, তাঁরা ওই পরিমাণ কাজ পাচ্ছেন না। আর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান যাঁরা আছে, তাঁদের কোনো সাইনিং পাওয়ার নেই। সাইনিং পাওয়ার যদি না দেওয়ায় মানুষের কাছে আমরা জবাব দিতে পারি না। সে ক্ষেত্রে এ পদ না থাকাই ভালো।’
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনে মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তাঁরা রাজনৈতিক দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ মহিলা রাখা বাধ্যতামূলক করা, নির্বাচনে ব্যয় কমিয়ে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন সংখ্যা ১০০ বা ১৫০টি করার প্রস্তাব করেছেন।
পাঠকের মতামত